আত্মার অস্তিত্বকে উপলব্ধি করার উপায় কী?

আত্মার অস্তিত্বকে উপলব্ধি করার উপায় কী?

তুমি যদি আমার বা অন্য কারো কথা সারা বছর ধরে শুনে যাও  অথবা তুমি কুরআন,পুরাণ, বাইবেল, বেদ, বেদান্ত, ত্রিপিটক, জেন্দাবেস্তা, গ্রন্থসাহেব বা পৃথিবীর তাবৎ গ্রন্থ যদি পড়ে ফেলো এমনকি যদি মুখস্তও করো তবু তুমি আত্মার অস্তিত্বকে উপলব্ধি নাও করতে পারো। যদিও মানুষ নিজের  অস্তিত্বের ব্যাপারে সন্দিহান নয়। তবে এ দৃশ্যমান শরীরই মানুষের অস্তিত্বের প্রমান নয়। কেননা শরীর মৃত ব্যক্তিরও থাকে। পার্থক্য হলো — আত্মা দেহটিকে ত্যাগ করেছে। তার মানে হল– যে বের হয়ে চলে গেলো সেই আসল” তুমি”। এই দেহটি নয়। এই জীবদ্দশায় ওই অচিন পাখিকে চূড়ান্ত অনুভবে আনতে তোমাকে অবশ্যই ধ্যানের পথে হাঁটতে হবে।

তুমি যদি আমার” কিমিয়া বা জীবনের অমৃত” নামক ধ্যানটা রপ্ত করার মধ্যদিয়ে ধ্যানমগ্ন হয়ে ওঠো এবং লাভইজমে দীক্ষিত হও তবে সহজেই আত্মাকে উপলব্ধি করতে পারবে।  নির্জনে চোখ বন্ধ করে কিমিয়াতে বসলে কিছুদিনের মধ্যেই তুমি ধ্যানমগ্ন হয়ে উঠবে। ধ্যানমগ্ন হয়ে কিমিয়াতে বসলে ধীরে ধীরে তুমি তোমার নিজ দেহকে ভুলে যাবে। দেহ তোমার সচেতন স্মৃতি থেকে সরে যাবে। তারপর যাবতীয় বস্তু এমনকি পৃথিবী তথা সমগ্র অস্তিত্ব  তোমার অনুভবের বাইরে চলে যাবে। তখন তোমার নিজ অস্তিত্ব ধ্যানপথে অবশ্যই ধরা পড়বে। দেহ-জমিন- আসমান কোনো কিছু নেই কিন্তু তুমি নিজে যে বিদ্যমান আছো এ বিষয়ে তোমার কোনো সন্দেহ থাকবে না।

এটা নিয়মিত চর্চা করে গেলে তোমার মধ্যে প্রবেশ করবে এক নির্দিষ্ট মাত্রার নিরবতা ও স্থিরতা আর তোমার মধ্য সঞ্চিত হবে প্রচুর পরিমান শক্তির এক অভৌত মাত্রা। যার প্রভাবে তোমার শরীরতন্ত্রের সকল হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার তাদের নিজ নিজ খেয়াল খুশিমত আচরণ করতে পারবে না। তারা নত হয়ে আসবে এবং নিজস্ব সীমানা ভেঙে ফেলে আত্মার আনুগত্য স্বীকার করবে। পৃথিবী যেমন বিনা বাক্য ব্যয়ে সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে তেমনি তুমি(রূহ) যদি একবার আপন আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠো তবে দেহ মন প্রাণসহ আর যা কিছু তোমার আছে সব বিনা বাক্য ব্যয়ে তোমার বশ্যতা স্বীকার করে নেবে এবং নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে তোমাকে কেন্দ্র করে ঘুরবে অর্থাৎ হুকুম তামিল করবে। একটা পরমাণুর ইলেকট্রন প্রোটন নিউট্রনও নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলে। কিন্তু তুমি কেনো শরীর মন আবেগের সাথে নিজেকে একীভূত করে ফেলো। দূরত্ব অপরিহার্য। অন্তত শরীর ও মনের সাথে। একবার এ দূরত্ব তৈরি হলে সব ভোগান্তি শেষ। তখন তুমি(রূহ) কোনো ঝামেলা ছাড়াই দেহ রাজ্যের রাজা হবে এবং সুশৃঙ্খলিত ভাবে রাজ্য পরিচালিত হতে থাকবে। আর এটা তোমার জীবনে বাস্তবায়িত করতে লাভইজম হল এক অব্যর্থ প্রযুক্তি। লাভইজমে দীক্ষিত হলে পারলৌকিক বহু তত্ত্বজ্ঞানও লাভ করবে। যেমন, তুমি বুঝতে পারবে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আসমান জমিন ভুলে গেলেও যখন অস্তিত্বের বিলুপ্তি ঘটে না তখন মৃত্যু ঘটলেও তার বিলুপ্তি ঘটবে না। তুমি যে অবিভাজ্য, অবিনশ্বর ও মর্যাদাবান সত্তা এ বিষয়ে তোমার কোনো সন্দেহ থাকবে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *