কী সেই রহস্য?
যা ভেদ করতে পারলে জীবনের সকল সমস্যার সমাধান।

প্রশ্ন: মানবজীবনে সকল সমস্যার মূলে কী আছে?/ কী সেই রহস্য? যা ভেদ করতে পারলে জীবনের সকল সমস্যার সমাধান।
উত্তর: ওহ্ তুমি দেখছি একঢিলে সব পাখি মারতে চাইছ! চাইছ একটা ম্যাজিকাল পাওয়ার! কিন্তু তোমার নিজের বাইরে যে বিশ্ব সেখানে ওভাবে কাজ হয় না। বাইরের পৃথিবীতে এক ঢিলে একটা পাখি মারতে পারবে কী না সন্দেহ। অর্থাৎ কোন কাজ উদ্ধারে একটা কৌশল অনেক সময় কাজ নাও করতে পারে।
কিন্ত প্রশ্নটা যখন তোমার নিজের ভিতর বিষয়ক অর্থাৎ এই খানের – তখন অবশ্যই একটা উপায় আছে। কারণ এইখানে – তোমার ভিতরে যত পাখি ওড়ে সবগুলোই তোমার নিজের সৃষ্টি এবং তুমি চাইলেই নিমিষে সবগুলোকে শিকারও করতে পারো কারণ সবই তোমার করতলগত।
তাহলে আসো বিষয়টা সবিস্তারে বোঝা যাক। তোমার জীবনের সকল সমস্যার মূল হল তোমার নিজের শরীর, মন, আবেগ ও প্রাণশক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকা। এগুলোকে চালানোর কথা ছিল তোমার কিন্তু ঘটছে ঠিক তার উল্টো! ওরা তোমাকে চালাচ্ছে। আর পুরো বিপত্তিটা এখানেই।

কারণ ঘোড়া শক্তিশালী প্রাণী সে কেন একটা জড় গাড়ির বশ্যতা স্বীকার করে নেবে? সে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেই। হয় সে মরবে না হয় গাড়ি ভাঙবে। কিছু একটা ঘটবেই। এই মুহুর্তে তোমার সাথে ঠিক এই ঘটনাটাই ঘটছে। তুমি নিজে মহান সৃষ্টিকর্তার, মহা পরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী আল্লাহপাকের আদেশ– মিন আমরি রব্বী। তুমি নিজে অর্থাৎ রূহ যার তার আদেশ নয়, পরমের আদেশ এবং এটা নিঃসন্দেহে এক চরম সত্তা। সে কেন ভঙ্গুর নশ্বর এবং তোমার নিজের জড়ো করা শরীর মন আবেগ ও প্রাণশক্তির বশ্যতা স্বীকার করবে? করবে না। কিছুতেই না। এটা অসম্ভব। তাই বিপত্তিটাও খুব চরম পর্যায়ের। এটা মৃত্যুর মধ্য দিয়েই শেষ হয়ে যায় না।

এ জন্য তোমাকে অবশ্যই বুঝতে হবে তুমি নিজে ( রূহ) তোমার এ দেহ রাজ্যের রাজা। আর মন, আবেগ,প্রাণ বা আরো যা কিছু আছে সবই তোমার প্রজা বা কর্মচারী। এরা আছে তোমার সেবা করার জন্য। তুমি নিজে যে কারণেই হোক এতটাই বেখেয়ালী বা অদক্ষ রাজা যে প্রজাদের উপর তোমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অথবা তুমি ওদের সাথে এতটাই একীভূত হয়ে গেছো যে তোমার রাজ্যে কে রাজা আর কে প্রজা তা আর বোঝার উপায় নেই। ফলে বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয় নিয়তি হয়ে দাঁড়ায়।
তোমার শরীর নানা প্রবৃত্তি দ্বারা তাড়িত হয়ে প্রতিদিন বহু আবদার তোমাকে দিয়ে পূরণ করিয়ে নিচ্ছে। তোমার মনও সারাক্ষণ লাফাচ্ছে এমনকি ঘুমের মধ্যেও শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। সে নানা জায়গা থেকে জড়ো করা নানা ভ্রান্ত আইডিয়া, মতাদর্শ, দর্শন, তত্ত্ব, ব্যবসা, প্রেম, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা বানিয়ে তোমাকেই দেখাবে এবং নিঃসন্দেহে তুমিই ওই সিনোমার পরিচালক, তুমিই হিরো, তুমিই সব। শরীর ও মনের এ জঘন্য অত্যাচারকে বৈধতা দিতে, সুস্বাদু করে তুলতে লবনের মত কাজ করে অাবেগ। সে সবকিছুর সাথে লেপ্টে যায়; পরিপূর্ণভাবে মিশে যায়। সে ইতিহাস, পুরাণ,ধর্মগ্রন্থ, সাহিত্য ইত্যাদি ঘেটে বা যেকোনো উপায়ে শরীর ও মনের করা অন্যায়ের সে একটা দলিল বের করবেই, বৈধতা দেবেই। সে নানা যুক্তি দাঁড় করাবে, তর্ক করবে এবং কিছুতেই কাজ না হলে মায়ার বাধনে বেঁধে ফেলবে। তখন তুমি এই ত্রিশক্তির দাস। এ অবস্থায় পতিত হলে প্রাণশক্তি তোমার রাজদন্ড কেড়ে নেয়। আর সর্বশক্তি উক্ত ত্রিশক্তির পিছনে বেপরোয়াভাবে ব্যয় করে।
এই যখন অবস্থা— তোমার অস্তিত্ব সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল, অরাজকতাপূর্ণ, রাজাহীন এক রাজ্য– যার কামনা বাসনা অসীম হতে বাধ্য। যার প্রতি পদে পদে দ্বন্দ্ব- সংঘাত অনিবার্য।
তোমার হয়ত অনেক অর্থ সম্পদ থাকতে পারে। মায়া- ভালোবাসা- বন্ধন থাকতে পারে। তবু তারা তোমাকে সামলাতে পারবে না। তোমার প্রিয়জনের হাজারটা প্রেমময় প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে কারণ তুমি ইতোমধ্যে নিজেকে এমন এক কিম্ভূতকিমাকার জন্তু বানিয়েছো যার সাথে কোনো কিছুই খাপ খায় না। তখন তুমি ভাবো দুনিয়ার কোনো কিছু ঠিক নেই। সবকিছু নষ্ট। ঘর, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, পৃথিবী সব নষ্ট। তুমি খুব বিদ্রোহী হয়ে ওঠো অার ভাবো সবকিছু বদলাতে হবে। তোমার মনও লাফাতে লাফাতে বলবে – আমি পৃথিবী বদলে দেবো। কিন্তু তুমি নিশ্চিত থাকো, তুমি কিছুই করতে পারবে না। বরং তুমি সর্বদা দেখতে বাধ্য হবে যে তোমার হৃদয় রক্তাক্ত, ব্যথিত। বুক ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছে। রাগ, ক্ষোভ, দুঃখ, যন্ত্রণা, হতাশা, বিষাদ, উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ইত্যাদিতে তুমি আচ্ছন্ন। তুমি ওসবের সাগরে ডুবে আছো।
তাহলে এখন প্রশ্ন হলো এ বিপর্যয় থেকে বাঁচার উপায় কী?
হ্যাঁ, উপায় অবশ্যই আছে। তোমাকে রাজা হয়ে ফিরতে হবে। স্বীয় রাজ্যের কর্তৃত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নিতে হবে। এজন্য তোমাকে চারটি বিষয়ের উপর অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করতে হবে
১. নিজের পরিচয় বা আত্মজ্ঞান লাভ করতে হবে।
২. জানতে হবে নিজের কর্তব্যভার সম্পর্কে।
৩. পরিপূর্ণ রাজা হয়ে উঠতে হবে অর্থাৎ শিখতে হবে কীভাবে রাজ্য চালাতে হয়। রাজদন্ড কোথায় কীভাবে প্রয়োগ করতে হয়।
৪. তোমার সভাসদ ও প্রজাবৃন্দ থেকে তোমার সিংহাসন অবশ্যই এবং অতি অবশ্যই একটু উঁচুতে স্থাপন করতে হবে। — কারণ, রাজা বা কাজীর আসন প্রজা বা আসামীর পায়ের কাছে হতে পারে না।
মাত্র এ চারটি বিষয় নিশ্চিত করতে পারলেই তোমার সব ভোগান্তি শেষ। আর নিশ্চিতভাবেই এ দক্ষতা অর্জন করার ক্ষমতা প্রত্যেকটা মানুষের রয়েছে।