“প্রেমের দৃষ্টি” জিনিসটা ঠিক কী?

''প্রেমের দৃষ্টি" জিনিসটা ঠিক কী?

প্রশ্নকারী: প্রেমের দৃষ্টিতে দেখলে নাকি সবই সুন্দর লাগে। তো স্যার আপনার কাছে জানতে চাই এই প্রেমের দৃষ্টি জিনিসটা ঠিক কী?

 শেখ শাহ: প্রেম হলো তোমার আবেগের মধুরতা। কোনো কারণে তোমার আবেগ যদি মধুর হয়ে ওঠে তবে তোমার মধ্যে এক ধরণের আনন্দের জোয়ার শুরু হয়। এ এমন এক জোয়ার যা তোমার ভিতরের অনেক কদর্যতাকে মুহূর্তে ভাসিয়ে নেয়। অনেক কারণেই মানুষের আবেগ মধুর হয়ে উঠতে পারে। তবে সচরাচর নারী- পুরুষের পরস্পর আকর্ষণের কারণে এ জোয়ার মানুষ খুব অল্প সময়ের জন্য টের পায়।

আবেগের এ মাধুর্যের জোয়ারে ভাসার অভিজ্ঞতা বেশিরভাগ মানুষেরই রয়েছে কিন্তু তারা এ জোয়ারকে ধরে রাখতে পারে নি এবং এখন ভাটার কাদায় পড়ে কাঁদছে। বাস্তব পরিস্থিতি, জাগতিক নানা হিসাব নিকাশ, সুযোগ সুবিধা ও চাওয়া পাওয়ার জটিল সমীকরণে এ জোয়ার টিকতে পারে না। এটা অনেকটা ওই শরবতের গল্পের মত। গ্লাস তোমার, পানি তোমার, চিনি তোমার, চামচ তোমার, কিন্তু কেউ একজন একটু লেবু চিপে দিয়ে বলল শরবতটা তার। তুমি একটু মনোযোগী হলেই অনুধাবন করতে পারবে যে, আবেগের মধুরতাটা সৃষ্টি হয়েছিল তোমার ভিতরে, বাইরে কোথাও নয়। এখানে আবেগটা তোমার, রসায়নটা তোমার, ফ্যাক্টরিটা তোমার, শুধু বিক্রিয়া ঘটানোর জন্য তুমি অন্য কারো সাহায্য নিয়েছো এই যা! আর তাকেই দিয়ে দিচ্ছ সব কৃতিত্ব। যা একেবারেই সমীচীন নয় কারণ সে তোমার নিজের অংশ নয়। সে বাইরের কেউ যার উপর তোমার নিয়ন্ত্রন কখনোই শতভাগ থাকবে না। আজ অথবা কাল সে অবশ্যই মুখ ঘুরিয়ে নেবে আর তুমি ভাটায় পড়ে যাবে। আর ভাটায় পড়া মানুষদের জন্য আর একটা জোয়ার তৈরি করা বেশ কঠিন ব্যাপার। তবে তুমি যদি চাও অর্থাৎ তোমার চাওয়াটা চূড়ান্ত পর্যায়ের হলে ওই বিক্রিয়াটুকুও তুমি নিজের মধ্যে ঘটাতে পারো বাইরের কারো হস্তক্ষেপ ছাড়াই। এটা সহজ, নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী। কারণ সৃষ্টিকর্তা তোমাকে ত্রুটিপূর্ণ করে সৃষ্টি করেননি যে তোমার নিজের আনন্দের জন্য অন্য কারোর মুখাপেক্ষি হতে হবে। ওই বিক্রিয়া নামক অমৃতের সাগর তোমার ভিতরেই রয়েছে। তুমি যথেষ্ট মনোযোগ দাও নি,  নিজের ভিতরে যথেষ্ট অনুসন্ধান করো নি তাই তা অনাবিষ্কৃত থেকে গেছে।

তুমি একটা কাজ করো। নির্জনে এগারো মিনিটের জন্য মেরুদন্ড সোজা করে বসে যাও। চোখের এক হাত সামনে ক্ষুদ্র কিছু একটা রাখো। সেটা হতে পারে এক টুকরো কাগজ বা কাগজের উপর দেওয়া একটা বিন্দু বা পাথর, মাটির ডিলা, কলমের হেড বা যা হোক কিছু একটা। এবার তার দিকে একটানা এগারো মিনিট তাকিয়ে থাকো। পাঁচ সাত মিনিট পরেই তুমি অনুভব করবে তোমার ভিতরে এক ধরণের কেমিকেল রিলিজ হচ্ছে যা তোমার শরীরতন্ত্রের বৈষম্যমূলক সচেতনতার সীমানা অতিক্রম করে জোয়ারের মত উপচে পড়ছে। এবং এর শক্তি, প্রভা বা জ্যোতি তোমার দু’চোখ দিয়ে ঝরছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমি অনুভব করবে তোমার সামনে রাখা বন্তুটা আর বাইরের কিছু নয় তোমার অংশ হয়ে গেছে। ওই বন্তুটা  এটা জানে না কিন্তু তুমি তার প্রতি সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রার একটা আবেশ অনুভব করবে। এভাবে কমপক্ষে এগারোটা দিন করো দেখবে তোমার ভিতরের বৈষম্যমূলক সচেতনতা উবে গেছে এবং তুমি প্রেমের দৃষ্টি লাভ করেছো। তোমার অভিজ্ঞতায় সবকিছু এক ও অভিন্ন হয়ে উঠেছে। ও খারাপ, ও শত্রু, ও বিপদজনক, আমি ভালো এরকম পার্থক্যকারী মনোভাব তোমার থাকবে না। তুমি আকাশ, গাছপালা, পশুপাখি, কীট- পতঙ্গ, মাটি, পানি, মানুষ যার দিকেই তাকাও মধুর দৃষ্টিতে তাকাবে। এক নিবিড় আপনবোধ দ্বারা তোমার দৃষ্টি ও মানসিকতা আচ্ছন্ন থাকবে। এটাই প্রেমের দৃষ্টি। যে প্রেমের দৃষ্টি লাভ করতে পেরেছে এবং সর্বদা প্রেমে থাকে সে এক ধন্য জীবনের অধিকারী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *